Poem by Swaralipi Das
বয়স ছিল তখন সবে মাত্র তেরো
পড়তে যেতাম দল বেঁধে সাইকেলে জনা পনেরো ।
মাঝে মধ্যেই অজানা কারণে কামাই হতো কারো কারো
স্যারের বাড়ির সামনে আড্ডা দিতো আরও জনা বারো ।
সেদিন ছিল চৈত্র মাস সময়টা ছিল বিকাল,
প্রচণ্ড দাবদাহে কয়েকজন ঢালছিল হিমেল জল
হঠাৎ শুরু হল কালবৈশাখী ঝড়
প্রচণ্ড ধূলোয় আবছা দেখলাম একটা নীল ঘর
ঘরের ভিতর পড়ছিল আমারি বয়সী ছেলে!
ঝড়ের তাণ্ডব মাঝে মাঝেই দেখছিল চোখ মেলে
আচম্বিত আমাদের মধ্যে হল দৃষ্টি বিনিময়,
আমার কাছে জানতে চাইলে দিলাম পরিচয়
সুদর্শন সে, সমবয়সী ও নিষ্পাপ ছিল তার চাউনি
অস্পুট স্বরে বুঝিয়ে দিল তার ভালোলাগার কাহিনী,
ঝড় থামল,শান্ত হল মেদিনী।
বাড়ির ভয়ে মেয়েটি আজও তাকে মনে স্থান দেয়নি
সেদিনের সেই ঝড় ওঠেনি শুধু গগনে
উঠেছিল যে আমারও চিন্তনে!
তবুও প্রথম ভালোবাসার মানুষ যে পারেনা ভুলতে
তাইতো জীবনে অব্যক্ত কত যন্ত্রণা হয় সইতে।
এরপর কেটে গেল অনেক বছর
মেয়েটি পেয়েছে আজ অন্য ঘর অন্য বর!
দায়িত্ব পালনে মেয়েটির হয়নি কখন স্থানচ্যুত !
মাঝে মাঝে পুরোনো স্মৃতি আবছা হয়ে যেত
কখনো কনকনে শীতের হিমেল হাওয়ায়
বা ঘনায়মান বর্ষায় তার কথা ভেবে ম্লান হওয়ায়!
এবছর মেয়েটি তার বাবার বাড়ি এল,
চলার পথে নীল বাড়িটায় আজও ছেলেটিকে দেখল
আজ সে হয়েছে পর হয়তো অন্য কারোর বর
চোখাচোখি হয়েই আবার উঠল ঝড়!
মেয়েটির মনে প্রশ্ন জাগে ‘আজও বারান্দায়
তুই কি আমারি অপেক্ষায় ?’
হঠাৎ মেয়েটির স্বামী তাকে ডাকল
মেয়েটি তখনি কল্পনা ছেড়ে বাস্তবে ফিরে এল।
না পাওয়ার যন্ত্রণায় আজও দুজন কাঁদে
মেয়েটি আনমনে ঘুরে বেড়াচ্ছিল ছাঁদে।
হঠাৎ ই শুনল নীল বাড়িটার সামনে কি ভীড়!
এগিয়ে গিয়ে দেখল নিথর দেহ সেই ছেলেটির
থেমে গেছে অনেক স্বপ্ন তার কামনার
চলে গেল সে এই পৃথিবীর সব মায়াকে উপেক্ষা করে দাপটে করোনার!
জলস্রোতরোধার্থ বাঁধেরমতোই বর্ষিত হল অশ্রু,নিরূদ্ধ হল নয়ন
মানেনি কারোর কথা মেয়েটি আর সেদিন
মনে হলো সময়ের কথা সময়ে বলতে না পারায়
সড়িয়ে দিল ভাগ্য দুজনকে দুই ভিন্ন নৌকায়!
হতভাগ্য মেয়েটির চোখের জলের দাম দিল ঈশ্বর
ফেরার পথে গাড়ি চাপাপরে পিষে গেল দেহ নশ্বর।।
-স্বরলিপি দাস